জমি প্রস্তুতকরণ
ফল চাষের জন্য জমি তৈরি করা অন্যতম কাজ । স্থান নির্বাচনের কাজ শেষ হলে নির্বাচিত স্থানের ভূমিকে নকশা করার উপযোগী করে তৈরি করে নিতে হয় । এ উদ্দেশে নিচু জমি ভরাট করা, মাটি সমতল করা, সুবিধাজনক ভাবে প্লট তৈরি করা, সেচ নিকাশের জন্য নালা, বাগানের অভ্যন্তরীন রাস্তা ও গার্ডসেড ইত্যাদির জন্য স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন । জমির বন্ধুরতা ও মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী এসব কাজ এমনভাবে করতে হবে যেন পরবর্তীকালে বাগানের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা সহজ ও কম ব্যয়বহুল হয় এবং মূল্যবান জমি নষ্ট না হয় । জঙ্গল ঘেরা জমিকে কলা বাগানে পরিণত করতে হলে প্রথমে সমস্ত জঙ্গল ও অপ্রয়োজনীয় গাছ শেকড়সহ উপড়ে ফেলে মাটিকে সমান করে সুবিধাজনকভাবে প্লটে বিভক্ত করে নিতে হবে । পতিত জমি হলে প্রয়োজনানুসারে প্লট আকারে তৈরি করে নিতে হবে। স্বল্প মেয়াদি ফল যেমন কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ ইত্যাদির জন্য ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে । দীর্ঘমেয়াদি ফসলের ক্ষেত্রে জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হবে । পাহাড়ী এলাকায় ভূমি ক্ষয়ের ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং ক্ষয়রোধ করার জন্য মাটি তেমন ওলট পালট না করেই বাগান তৈরি করতে হবে । ভালোভাবে জমি চাষের ফলে অনেক বিষাক্ত পদার্থ অপসারিত হয়। এতে করে চারা লাগানোর পর সহজে চারা রোপণজনিত ধকল সহ্য করে বেড়ে উঠতে পারে ।
সারণি – ক
গাছের আকৃতি অনুযায়ী চারা বসানোর গর্তের মাপ নিম্নে দেয়া হলো
ফল গাছ রোপণের জন্য গর্ত তৈরীর কৌশল
বাগানে কাঙ্খিত পরিমাণ ফলন পেতে হলে চারা রোপণের জন্য গর্ত করা এবং গর্তে পরিমাণ মত সার প্রয়োগ করা অপরিহার্য । চারাগাছ লাগানোর সময় পরিমিত আকারের গর্ত খনন করা আবশ্যক । তবে গর্তের আকার নির্ভর করে চারার আকার ও গাছের প্রজাতির উপর । ফল গাছের চারা রোপণের জন্য অন্তত পক্ষে ৩টি কাজ করা আবশ্যক। যথা—
(ক) সঠিক সময় ও সঠিক মাপে গর্ত খনন
(খ) গর্তে উপযুক্ত পরিমাণ সার প্রয়োগ ও
(গ) গাছের বৈশিষ্ট্য মোতাবেক চারা রোপণ ও পরিচর্যা
ক) গর্ত খনন: চারা রোপণের জন্য গর্ত খননের গভীরতা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মতামত আছে । গর্ত বর্গাকার ও অগভীর হলে চারার শেকড় কুণ্ডলী পাকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । তবে যতদূর সম্ভব গর্ত যথেষ্ঠ গভীর ও চওড়া হওয়া বাঞ্চনীয় । চারা অবস্থায় শেকড় দুর্বল থাকে তাই গর্তের চারিপাশের শক্ত মাটিভেদ করে সহজে খাদ্য ও রস সংগ্রহ করতে পারে না। গর্তের আকার বড় করে এবং উপরের মাটি নিচে দিয়ে গর্ত ভর্তি করে দিতে হয় । এতে দুর্বল ও নরম মুল সমূহ নরম মাটি হতে সহজে রস নিয়ে তাড়াতাড়ি বড় হতে পারে । অনুর্বর মাটিতে এই পদ্ধতি অনুশীলন অত্যন্ত ফলপ্রসু । শুষ্ক ও বৃষ্টিপাতহীন অঞ্চলের মাটিতে শক্ত ও অপ্রবেশ্য স্তর থাকে । এক্ষেত্রে শক্তিশালী যন্ত্র ব্যবহার করে শক্তস্তর ভেঙ্গে দিয়ে ভালভাবে গাছ জন্মানো যায় ।
বৃক্ষ জাতীয় গাছের জন্য ৫ ফুট ব্যাস ও ৪ ফুট গভীর করে গর্ত করা যায় । গর্ত খননের পর উপরের মাটি নিচে দিয়ে গর্ত পুরণ করতে হয় । এতে গাছের শেকড় খুব ভালভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে । বড় গর্তে রোপণকৃত গাছের শিকড় ১ বৎসরে ৭.৫ ফুট গভীরে এবং পাশে ৬ ফিট পর্যন্ত ছড়াতে পারে । অথচ ছোট গর্তে রোপণকৃত গাছের শেকড় ১ বৎসর ২ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ।
চারা রোপণের জন্য এক সপ্তাহ হতে প্রায় একমাস পূর্বে গর্ত খননে অনেকক্ষেত্রেই তেমন কোন গুরুত্ব বহন করে । বেশি আগে গর্ত খনন করে রাখলে গর্তের পাশের ও তলদেশের মাটি শক্ত হয়ে যায় । এরূপ ক্ষেত্রে চারা রোপণের আগে পুনরায় গর্ত খনন করে নিতে হয় ।
অনুর্বর মাটিতে গর্তের উপরের মাটির সাথে সার মিশিয়ে নিচে দিয়ে গর্ত ভরাট করা হলে গাছের তেজ বেশি হয় । কিন্তু চারার গোড়ার চারপাশে যদি নিয়মিত সারযুক্ত মাটি প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে গাছের বৃদ্ধি আস্তে আস্তে কমে যায় ।
ফল গাছ রোপণের জন্য জাত ভেদে গর্ত করার সময়
বর্ষাকাল অর্থাৎ মে থেকে জুলাই মাস জাত ভেদে সকল ধরনের চারা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় । চারা লাগানোর পর এ সময় সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না । বর্ষা বেশী হলে বর্ষার পরও চারা লাগানো যেতে পারে । মেঘলা দিনে বা বিকেলের দিকে চারা লাগানো ভালো । পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে বসন্তের প্রথমেও চারা লাগান যায় । জাতভেদে সকল ধরনের ফল গাছ রোপনের জন্য বর্ষার আগে অর্থাৎ বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠ মাসে গর্ত করা উত্তম । গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ এবং শেকড়ের বৃদ্ধির জন্য গাছ রোপণের আগে গর্ত করা একান্ত প্রয়োজন । ভিন্ন ভিন্ন গাছের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দুরত্বের এবং আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে । সাধারণত কোন গাছের জন্য কী আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে, তা নিম্নোক্ত বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে । যথা—
ক) গাছের আকৃতি
খ) শেকড়ের গভীরতা
গ) শেকড়ের বিস্তৃতি
ঘ) চাষের মেয়াদকাল
ঙ) গাছের খাবারের চাহিদা ইত্যাদির ওপর
গাছের আকার, মৌসুম ও মাটি ভেদে গর্তের আকার ও আয়তন
জমি তৈরি সম্পন্ন হলে রোপণ প্রণালী নির্বাচিত করে নির্দিষ্ট দুরত্বে গাছ লাগান উচিত । গাছ লাগানোর জন্য নির্বাচিত স্থানে গর্ত করা উচিত । গর্ত তৈরির জন্য নিম্নবর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে ।
গর্ত তৈরির ধাপ: গর্ত তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন- কোদাল, বেলচা, খুন্তি ইত্যাদি আগেই যোগাড় করতে হবে।
১) জমিতে গর্ত করার আগে চারা রোপণের নকশা মোতাবেক ফিতা বা কাঠির সাহায্যে মাপ দিতে হবে । মাপ দিয়ে নির্ধারিত দূরত্বে খুঁটি পুঁতে চারা রোপণের স্থান চিহ্নিত করতে হবে ।
২) চারা রোপণের ২০-৩০ দিন আগে গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে পরিমাণ মত সার দিয়ে মাটি ভরাট করে দিতে হবে । গর্তের মাটি এমনভাবে চেপে দেয়া দরকার যাতে মাটি আলগা না থাকে ।
৩) যে সব জায়গায় উইপোকার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে সেখানে উইপোকা প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে । নারিকেল গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এটি খেয়াল রাখা উচিত।
৪) গাছের আকৃতি বিবেচনা করে গর্তের ব্যাস ও গভীরতা নির্ণয় করতে হবে । যেমন—
(ক) ছোট আকারের গাছের জন্য গর্তের ব্যাস হবে ৫০ সে:মি: এবং গভীরতা হবে ৫০ সে:মি: (খ) মাঝারি আকারের গাছের জন্য গর্তের ব্যাস হবে ৬০ থেকে ৭৫ সেমি এবং গভীরতা হবে ৬০-৭৫ সেমি (গ) বড় বা বৃক্ষ জাতীয় গাছের জন্য গর্তের ব্যাস হবে প্রায় ১ মিটার এবং গভীরতা হবে প্রায় ১ মিটার ।
ছক: গাছের আকৃতি অনুযায়ী চারা লাগানোর গর্তের মাপ ও চারার দুরত্ব
গাছের আকৃতি | চারা লাগানোর গর্ভের মাপ | একটি চারা থেকে আরেকটি চারার দূরত | গর্ত খনন বা রোপনের মৌসুম |
(ক) বড় বা বৃক্ষজাতীয় গাছ (আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, বেল তেঁতুল ইত্যাদি) | ১ মিটার ব্যাস ও মিটার গভীর বা ৯০ ৯০ সে:মি: | ৭-৮ মিটার | বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র-আশ্বিন পর্যন্ত |
(খ) মাঝারি গাছ (পেয়ারা, আতা, শরিফা, সফেদা, লেবু, ডালিম, পীচ, জামরুল, জাম্বুরা, অরবরই ইত্যাদি) | ৬০ সে:মি: মিটার ব্যাস ও ৬০ সে:মি: গভীর বা ৭৫৭৫ সে:মি: | ৪ মিটার | বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র-আশ্বিন পর্যন্ত |
(গ) ছোট গাছ (কলা, পেঁপে, সুপারি ইত্যাদি) | ৫০ সে:মি: ব্যাস ও ৫০ সে:মি: গভীর | ২ মিটার | বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে |
(ঘ) খুব ছোট (আনারস, স্ট্রবেরী ইত্যাদি) | ১৫ সে:মি: ব্যাস ও ১৫ সে:মি: গভীর | ৩০ সে:মি: | বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে |
মাটির বুনট বুঝে গর্তের আকার কম বা বেশি করা যেতে পারে । যেমন- বেলে দোঁআশ মাটির জন্য গর্তের আকার কিছুটা ছোট করা যেতে পারে । কেননা বেলে মাটিতে গর্ত বড় করা হলে চারপাশের পাড় ভেঙ্গে গর্ত ভরাট হয়ে যেতে পারে । আবার এটেল বা এটেল দোআশ মাটির জন্য গর্তের আকার কিছুটা বড় করা যেতে পারে । বৃক্ষ শ্রেণির গাছের জন্য ৫ ফুট ব্যাস ও ৪ ফুট গভীরতাবিশিষ্ট গর্ত খনন করা যেতে পারে । বড় গর্তে রোপণকৃত চারার শেকড় ১ বছরে ৭.৫ ফুট গভীরে এবং পাশে ৬ ফুট পর্যন্ত ছড়াতে পারে । অথচ ছোট গর্তে রোপণকৃত গাছের শেকড় ১ বছরে ২ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে । কারণ ছোট গর্তের চারিদিকের শক্ত মাটির স্তুর থাকে ।
(৫) গর্ত খনন করার সময় গর্তের খননকৃত মাটি ছড়িয়ে রেখে শুকায়ে নেয়া ভাল । গর্তের উপরিভাগে ১৫ সে:মি: বা তিনভাগের দুইভাগ মাটি একদিকে রাখতে হবে । অনুরূপভাবে গর্তের নিচের দিকের তিনভাগের একভাগ মাটি অন্য দিকে রাখতে হবে । গর্তের উপরের দিকের মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি পরিমাণে থাকে ।
(৬) গর্তের উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনীয় সার মেশানোর পর গর্ত ভরাট করার সময় উপরের অংশের মাটি নিচে দিতে হবে। আর নিচের অংশের আলাদা করে রাখা মাটি গর্তের উপরিভাগে দিতে হবে। জমির উপরিভাগের মাটি বেশি উর্বর । উপরের মাটি নিচে দিলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান তাড়াতাড়ি পাবে ।
গর্তে সার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা
ফল গাছে সার প্রয়োগের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য গাছের চেয়ে ফল গাছে মাটি হতে প্রচুর খাদ্য ও পুষ্টি টেনে নেয় এবং এই পুষ্টি ক্রমাগত কমার ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় । ফলে মাটির উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলশ্রুতিতে ফলন কমে যায় ।
সব গাছের সমান পরিমাণ খাবার লাগেনা । আবার গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিমাণ পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন হয় । নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর ফল গাছের সারের মাত্রা নির্ভর করে ।
১। ফল গাছের ধরন
২। গাছের আকার ও বয়স
৩। ফলের জাত
৪ । গাছের বৃদ্ধির স্বভাব
৫ । গাছের বৃদ্ধির পর্যায়
৬ । আবহাওয়া
৭ । উৎপাদন মৌসুম
৮ । মাটির প্রকৃতি এবং উর্বরতা শক্তি
৯। সার ব্যবহার পদ্ধতি
১০ । চাষাবাদ পদ্ধতি
১১ । সেচ ব্যবস্থাপনা
১২। জমির ফসল বিন্যাস
সার ব্যবহারে গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং ফলের উৎপাদন বেড়ে যায় কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে ত্রুটিপূর্ণ সার ব্যবহারের ফলে গাছের ক্ষতিও হতে পারে । অসময়ে গাছে সার ব্যবহার করলে গাছের ফল ধারণ ব্যাহত হতে পারে । তাই সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে ও পরিমাণে সার ব্যবহার করা উচিত ।
গর্তে সার প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
গাছের (ছোট বা বড়) আকৃতির ওপর নির্ভর করে ছকে (ছক-১) বর্ণিত ও অন্যান্য নিয়ম মোতাবেক গোবর বা কম্পাস্টে সার, হাড়ের গুড়া বা টিএসপি সার, ছাই বা এমপি সার মাটির সাথে মেশাতে হবে ।
চারার উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য গর্তে সময়মত সার ব্যবহারের ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয় এবং ফল ধরার পরিমাণ বেড়ে যায় । এছাড়া অসময়ে সার ব্যহার করা হলে সারের অপচয় হয় এবং গাছের ফল ধারণে অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করার পর মাটি শুকনা থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে । এর কমপক্ষে ১০-১২ দিন পর গাছ লাগাতে হয় । কেননা সার প্রয়োগের পর পর চারা লাগানো হলে রাসায়নিক সারের বিক্রিয়ায় চারা মারা যেতে পারে । রাসায়নিক সার গর্তের নিচের ৩০ সেমি. মাটির সাথে মিশানো উত্তম । গাছের আকার বিবেচনা করে হাড়ের গুড়ার পরিবর্তে তার অর্ধেক পরিমাণ টিএসপি এবং ছাই-এর পরিবর্তে প্রতি কেজি ছাই এর জন্য ১০০ গ্রাম এমপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছক: গাছের আকৃতির ওপর নির্ভর করে
সার মিশ্রিত মাটি গর্তে দেয়ার পর পা দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে । কেননা বৃষ্টিপাত বা সেচ দেয়ার পর গর্তের মাটি নিচু হয়ে গেলে পানি জমে চারার ক্ষতি হতে পারে । সাধারণত চারা রোপণের পূর্বে গর্তে যে পরিমাণ সার দেয়া হয় তার অর্ধেক পরিমাণ সার বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে বাকী অর্ধেক দিতে হবে। পরবর্তীতে চারার বৃদ্ধির সাথে সাথে বৎসরওয়ারী সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এভাবে চারা লাগানোর পর হতে ফলবান হওয়া পর্যন্ত যত্ন নিতে হবে, যাতে গাছ সুস্থ সবল ও সতেজ থাকে । সার প্রয়োগের সময় চারার একেবারে গোড়ায় সার দেয়া উচিত নয় । চারা বা ছোট গাছের ক্ষেত্রে চারার গোড়া হতে কমপক্ষে ০.৫ মিটার ও বড় গাছের ক্ষেত্রে ১ মিটার দূর দিয়ে সার ব্যবহার করতে হবে । তবে সাধারণভাবে চারার পাতা যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে ঠিক ততদুর পর্যন্ত দূর দিয়ে সার দিতে হবে । কারণ পাতার বিস্তৃতির সাথে সাথে শেকড়ের বিস্তৃতির একটা সম্পর্ক আছে। শুধু মাটির উপর সার দিলে সারের অপচয় হবে । তাই দুপুর বেলায় যতদূর গাছের ছায়া পড়ে ততদূর দিয়ে বৃত্তাকারে দাগ দিয়ে নিয়ে সেটুকু স্থানের মাটি আলগা করতে হবে । মাটি আলগা করার সময় কোদাল বা খুরপি ব্যবহার করতে হবে । চারার চারিদিকে বৃত্তাকারভাবে ঘুরে ঘুরে মাটি আলগা করা প্রয়োজন । এতে চারার শেকড় কম কাটার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়া স্থানে স্থানে গর্ত করে বা চিকন নালা কেটেও সার প্রয়োগ করা যায় । সার দেয়ার পর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । গর্ত বা নালা করা হলে তা সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে । সার দেয়ার পর হালকা পানি দেয়া উচিত । তাহলে সার থেকে খাদ্য উপাদান গাছ সহজেই গ্রহণ করতে পারবে । সার
ছক: চারা লাগানোর পর থেকে উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত গাছ প্রতি জৈব সারের পরিমাণ (কেজিতে)
রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে টিএসপি'র পরিবর্তে হাড়ের গুড়া সার এবং এমপি'র পরিবর্তে ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে এক্ষেত্রে টিএসপি সার যে পরিমাণ ব্যবহার করা হয় তার দ্বিগুণ পরিমাণ হাড়ের গুড়া সার ব্যবহার করতে হবে । আর এমপি সার যে পরিমাণ ব্যহার করা হয় তার আটগুণ পরিমাণ ছাই ব্যবহার করতে হবে । সারের মোট পরিমাণকে দু'ভাগে ভাগ করে একভাগ গ্রীষ্মের শুরুতে এবং আর একভাগ বর্ষার শেষে প্রয়োগ করা ভালো ।
ফল গাছের জন্য সার (দীর্ঘমেয়াদি ফল গাছের জন্য)
সারের নাম | গর্তে সারের পরিমাণ | বাৎসরিক বৃদ্ধির পরিমাণ | ১০ বছরে অধিক বৎসের জন্য |
পচা গোবর | ১০ কেজি | ১০ কেজি | ১০০ কেজি |
ইউরিয়া | ১০০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম | ৬০০ গ্রাম |
টিএসপি | ২৫০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম | ২ কেজি |
এমপি/ছাই | ১০০ গ্রাম/১ কেজি | ৫০ গ্রাম/৫০০ গ্রাম | ৬০০ গ্রাম/৬ কেজি |
হাড়ের গুড়া | ৫০০ গ্রাম | ২০০ গ্রাম | ৪ কেজি |
উৎস: ফুল ফল ও শাকসবজী - কামাল উদ্দিন আহমেদ
সারের মোট পরিমাণকে দুভাগ করে এক ভাগ বর্ষার শুরুতে ও অপর ভাগ বর্ষার শেষে মাটিতে প্রয়োগ করতে হয়।
অতি সংক্ষিত প্রশ্ন
১ । বড় গাছ রোপণের গর্তের মাপ কত ?
২। গর্তের আকার কিসের উপর নির্ভর করে ?
৩ । চারা বা ছোট গাছের ক্ষেত্রে চারার গোড়া হতে কমপক্ষে কত দূর দিয়ে সার ব্যবহার করতে হয় ?
৪ । ফল গাছে কখন সেচ দিতে হয় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ফল গাছ রোপণের জন্য গর্ত তৈরির কৌশল বর্ণনা কর ।
২ । গাছ রোপণের জন্য জাতভেদে গর্ত করার সময় উল্লেখ কর ।
৩ । গর্তে সার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর ।
৪ । গাছ রোপণের জন্য জাতভেদে গর্তের আকার কিরূপ হওয়া উচিত ।
৫ । নিম্নলিখিত আকৃতির গাছ রোপণের জন্য গর্তের আকার লেখ । বড়, মাঝারি, ছোট ও খুব ছোট ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১ । চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরির ধাপগুলো বর্ণনা কর ।
২। জমিতে গাছ লাগানোর জন্য গর্তকরণ ও সার প্রয়োগ সম্বন্ধে যা জান লেখ ।
৩ । গাছের আকার, মৌসুমে ও মাটি ভেদে গর্তের আকার ও আয়তন সম্পর্কে বর্ণনা দাও ।
৪ । গর্তে সার প্রয়োগের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা কর ।